Header Ads

উইকিলিকসে বাংলাদেশ // বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেষ্টা আগেও হয়েছিল



মুখবন্ধ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার তিন মাস আগেও তাকে হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালের ২১ মে'র ওই হত্যাচেষ্টার খবর প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমকে নির্দেশ দিয়েছিল। এসব কথা বলা হয়েছিল ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন এক তারবার্তায়। বিশ্বে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস সম্প্রতি এই তারবার্তা প্রকাশ করেছে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে ১৯৭৫ সালের ২৩ মে পাঠানো ওই তারবার্তায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল বলে দুটি সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। ২১ মে ঢাকার উপকণ্ঠে নতুন টেলিভিশন স্টেশন পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে ফেরার সময় তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এ বিষয়ে প্রথম জানা গেছে দূতাবাসের রাজনীতিবিষয়ক এক বাঙালি সহকারীর কাছ থেকে। রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ইউনিটের উপ-পুলিশ সুপার তাকে (দূতাবাসের সহকারী) এই তথ্য জানিয়েছেন। এরপর একজন সাংবাদিক দূতাবাসের তথ্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। 

উভয় সূত্রই জানিয়েছে, হামলাকারীরা গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে একটি সূত্র জানায়, শেখ মুজিব অক্ষত আছেন। তবে অজ্ঞাতপরিচয়, দু'জন আহত হয়েছেন। তথ্য অধিদফতর এ-সংক্রান্ত খবর না ছাপাতে গণমাধ্যমকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো অন্য এক তারবার্তায় বলা হয়, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জনগণের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তির ভাব দেখা গেলেও এ নিয়ে কোনো আনন্দ-উল্লাস হয়নি। নতুন সরকারে যারা আছেন তারা আগের সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে দুর্বল প্রশাসন পরিচালনায় ভূমিকা ছিল তাদেরও। তবে তারবার্তায় বলা হয়, নতুন সরকার আরও সহনীয় হবে বলে মনে হচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করবে বলে ধারণা করা যায়। তারবার্তায় বলা হয়, পঁচাত্তরের জুন মাস পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার ভাগ্নে শেখ মনি যৌথ প্রভাবে ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা করেছিলেন। 

অভ্যুত্থানকারীরা তাদের কর্মতৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারে এ বিষয়ে কালবিলম্ব করলে অভ্যুত্থান সম্ভব হবে না। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধু হত্যার সিদ্ধান্তটি ছিল নিছক ঘটনাক্রমে। বলা যায় কাকতালীয় ঘটনা। উইকিলিকস বলেছে, সে সময় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন ছিল এ অবস্থায় ভারত বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে পারে। নয়াদিলি্লর মার্কিন দূতাবাস ভারতীয় এক সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বার্তা পাঠান। সেই সামরিক কর্তা জানান, এ প্রসঙ্গে কোনো কিছু শোনেননি তিনি যাতে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ব কমান্ডের কোনো বিশেষ তৎপরতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, যদিও এ ধরনের কর্মকা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার জেনারেল জ্যাকব ও তার অধস্তন কমান্ডার মেজর জেনারেল হরি সেনগান সে সময় পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর আয়োজিত স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে ছিলেন। অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন। ওই সামরিক কর্মকর্তা হরি ও জ্যাকবের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, তারা দু'জনেই স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উদ্বেগহীন ছিলেন। কোনোভাবেই বাংলাদেশের কথা উঠে আসেনি। তবে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতের কাছে আগাম তথ্য ছিল। মার্কিন দূতাবাস ও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার আলোচনা সেটি নিশ্চিত করে। ভারতীয় সেই কর্মকর্তা বাংলাদেশের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই বার্তায় বলা হয়, ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রদূতদের জন্য দেওয়া নৈশভোজে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব কেওয়াল সিং ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পিএন ধর বাংলাদেশের চলতি ঘটনা নিয়ে নিরুদ্বেগ ছিলেন। তারা মন্তব্য প্রকাশেও সতর্ক ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে এই হত্যাকা নিয়ে চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভারতের গণমাধ্যমগুলোকেও বাংলাদেশের অভ্যুত্থান নিয়ে নিশ্চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। একটি সংবাদ সূত্র জানায়, ১৫ আগস্টের পর ভারত সরকার বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে যে কোনো ধরনের সম্পাদকীয় মন্তব্যও নিষিদ্ধ করেছিল



No comments

Powered by Blogger.